কক্সবাজার, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

দালাল চক্রের সন্ধানে পুলিশ

রোহিঙ্গা পাচারের নতুন রুট সিলেট

রোহিঙ্গা পাচারের নতুন ‘ট্রানজিট রুট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিলেট। নানাভাবে প্রলুব্ধ করে দালালরা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের বের করে এনে টাকার বিনিময়ে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজন রোহিঙ্গা আটকের পর এ চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ওই দালাল চক্রের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ।

এদিকে, দালালের হাত ধরে ভারতে অনুপ্রবেশে ব্যর্থ হলে রোহিঙ্গারা সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে- বিভিন্ন সূত্র থেকে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে সিলেট বিভাগের তিনটি পয়েন্ট থেকে ২৪ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর চলতি বছর আটক রোহিঙ্গার সংখ্যা শতাধিক। সবশেষ গত রবিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১৬ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ।
ওই দিন সকালে চট্টগ্রাম থেকে মৌলভীবাজারে আসা এনা পরিবহনের একটি বাস থেকে তাদের আটক করা হয়। কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক ক্যশৈনু ছুটি শেষে চট্টগ্রাম থেকে এনা পরিবহনের বাসযোগে (ঢাকা মেট্রো ১৫-৬৭০৩) মৌলভীবাজার আসার পথে সেই গাড়িতে থাকা কিছু যাত্রীকে রোহিঙ্গা হিসেবে সন্দেহ হয় তার। ক্যশৈনুর মাধ্যমে খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একটি টিম সকাল ৭টায় পৌর শহরের চৌমুহনায় অবস্থান নিয়ে ওই বাস আসামাত্র তল্লাশি চালায়। এ সময় নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ১৬ রোহিঙ্গাকে আটক করে ওই টিম।
এ ছাড়া একই দিন ভোর ৬টায় মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লাঠিটিলায় বিজিবির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা নালাপুঞ্জি থেকে এক রোহিঙ্গাকে আটক করেন স্থানীয়রা। পরে তাকে জুড়ী থানা পুলিশ ও লাঠিটিলা ক্যাম্পের বিজিবি জোয়ানদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক রোহিঙ্গা যুবক শরীফ হোসেন (২২) জানান, তিনি কক্সবাজারের ১ নম্বর কুতুপালং ক্যাম্পের জাহিদ হোসেনের ছেলে। তিনি ওই ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসেছিলেন। পরে তিনি কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং আগরতলায় পৌঁছে সেখান থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে চেকপোস্টে ধরা পড়েন।
পরে তাকে ত্রিপুরা রাজ্যের তারেকপুর বিএসএফ ক্যাম্পে পাঠানো হয়। সেখান থেকে বিএসএফ তাকে নালাপুঞ্জি এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশব্যাক করে। এর আগে ১৪ ডিসেম্বর জুড়ীর একই এলাকা থেকে আট রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। ওই আটজনকে স্থানীয় জনতা আটক করে বিজিবি ও পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানতে পরে- দালাল মারফত জুড়ীর এ সীমান্ত ব্যবহার করে তাদের ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়াও চলতি বছরের ২৫ আগস্ট ভারতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল সীমান্ত এলাকা থেকে সাত রোহিঙ্গা আটক হয়। ১১ জুন একই সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের চেষ্টাকালে পুলিশ এক তরুণীসহ পাঁচ রোহিঙ্গাকে আটক করে। ১২ মে মৌলভীবাজার শহরে শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার সড়কের বাসস্ট্যান্ড থেকে নারী ও শিশুসহ ১৮ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। তবে তারা ভারতে যাওয়ার পথে নয়, উল্টো ভারত থেকে কুলাউড়া উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে গিয়ে আটক হন। তাদের গন্তব্য ছিল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এ ছাড়াও গত তিন বছরে বিভিন্ন সময় সিলেট অঞ্চলে শতাধিক রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে। পরবর্তীতে তাদের কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে পাঠানো হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সীমান্ত ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর এসব ঘটনায় স্থানীয় মানব পাচারকারী চক্রগুলো জড়িত। দালালরা টাকার বিনিময়ে রাতের আঁধারে বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর নজর এড়িয়ে বিভিন্ন উপায়ে ভারতে পাচার করে রোহিঙ্গাদের। এ ছাড়াও মিয়ানমার থেকে ভারতে পালানো রোহিঙ্গারা সে দেশে থাকতে না পারলে দালালদের মাধ্যমে সিলেট সীমান্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশে আসছে।

পাঠকের মতামত: